মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ছোটগল্প - পিন্টু রহমান

ভ্রমরের ছোঁয়ায় অর্চনার ফুল
পিন্টু রহমান


সারি-সারি তালগাছ আর উঁচু-নিচু টিলা পিছনে ফেলে ট্রেনটি অবশেষে বাঙলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে; মিলা আর স্থির থাকতে পারেনা, খুশিতে ওর তনুমন নেচে ওঠে। বুকভরে শ্বাস নেয়, আহঃ বাঙলাদেশ, প্রিয় বাঙলাদেশ!
চারদিকে মুগ্ধতার আবেশ, প্রাণের স্পন্দন। নয়নের সীমানায় বিস্তির্ণ ফসলের মাঠ। পূবের হাওয়ায় পাকা ধানের শীষগুলো নুয়ে পড়েছে। আসন্ন শীতে প্রকৃতির সর্বত্রই বিরহের বসন। মাথার উপর দিয়ে ঝাঁকবেধে উড়ে যায় বুনোটিয়া।
মিলা তন্ময় হয়ে পাখিগুলোর পানে চেয়ে থাকে। আচ্ছা, পাখিগুলোর গন্তব্য কোথায়; ওরাও কি তার মতো শিঁকড়চ্যুত বৃক্ষ!
মিলা আনমনে মাথা ঝাঁকায়। দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে গেলে মুখটা অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। মৈত্রী এক্সপ্রেসের কামরাজুড়ে কেবল বিষন্ন বাতাস; বুকের গহীণে তীব্র ব্যথা। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিবেগ দ্রুত ওঠানামা করে। মিলা তখন মিথিলাকে কোলের মধ্যে টেনে নেয়।
- তোমার কি হয়েছে আম্মু, মামার জন্য কষ্ট হচ্ছে?
মিলা নির্বিকার। মন খারাপ নতুন কিছু নয়, প্রায়ই তার এমন হয়। অবশ্য আজকের অনুষঙ্গ অন্যরকম।
নির্জন মূহুর্তে অনেকগুলো চোখ তার স্মৃতির পর্দায় উঁকিঝুকি মারে। শর্বনাসা যুদ্ধের চিত্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অনুভূত হয় লাশের গন্ধমাখা উৎকট বাতাসও। সারা আকাশজুড়ে যেন শকুনের আনাগোনা! ভুবনডাঙার ঘরে-বাইরে লাল রক্তের স্রোত; কলতলায় পড়ে আছে বাবা মা’র ক্ষত-বিক্ষত লাশ।
মিলা অশংখ্যবার শিহরিত হয়। ভাবতে কষ্ট হয়, তাদের একটি সঙসার ছিল; সুখের সঙসার। ভালোবাসার আকুলতা এখনো তার ব্যাকুলতায় আঘাত করে। জীবনের ঐসব দিনগুলোতে বার বার ফিরে যাই ফিরে আসে। স্মৃতির আঙিনায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে শাহেদের মুখ।
শাহেদকে নিয়েই তো ধল প্রহরের আগে দিঘীর জলে শাপলা তুলতে যেত! রাতের পর রাত এক আকাশের নিচে বসে গল্প করতো, জীবনের ছবি আঁকতো।
ভাবলে মনে হয় সেদিনের কথা: অথচ মাথার উপর দিয়ে কত মেঘ উড়ে গেছে!

ভিড় ঠেলে মিলার ভাড়াকরা কামরায় হঠাৎই একজন আগন্তকের অনুপ্রবেশ। মিলা না করতে পারেনা; কেননা লোকটির একটা পা নেই- পঙ্গু। তবু মনের মধ্যে উঁচাটন। যা দিনকাল পড়েছে মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন। লোকটিকে তার অসহ্য লাগে। অজানা আশংকায় মনের মধ্যে আনচান করে। যদি চোর-ডাকাত হয়!
মিলা আঁড়চোখে লোকটিকে নিরীক্ষণ করে। বেশভূষায় চোরের সাখে খুববেশি অমিল নেই। তাকানোর ভঙ্গিমাও দৃষ্টিকটু। দাঁড়ি-গোঁফের আড়ালে চোখদুটো যেন বার বার জ্বলে ওঠে!
আগন্তকই প্রথম কথা বলে, আমাকে দেখে খুব রাগ হচ্ছে তাইনা? আসলে আমি একা না, পঙ্গু মানুষ দেখলে সবারই এমন হয়; আমার নিজেরও।
মিলা মনে মনে খানিকটা হোঁচট খায়। লোকটি কি তার মনের কথা পড়তে পারছে; নাকি নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করছে!
পঙ্গু লোকটি নিজেই মিলাকে আস্বস্থ করে, ভয় নেই ম্যাডাম, কিছুদুর গিয়েই নেমে পড়বো।
লাইটারের আগুনে আগুন্তক সিগারেট ধরায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত খাওয়া হয়না; মিলা বাঁধা দেয়, দেখুন, এটা আমার ভাড়াকরা কামরা; যা খুশি তা করতে পারেননা। দয়া করে অন্য কোথাও বসুন। তাছাড়া সিগারেটের গন্ধ আমার সহ্য হয়না।
কয়েক মূহুর্ত চিন্তা করে লোকটি জানালার বাইরে সিগারেট ছুঁড়ে মারে। তার নিজের ভিতরেও অনুশোচনা। মিলার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে, ছরি ম্যাডাম, বাচ্চাটার সামনে আমার সিগারেট ধরানো ঠিক হযনি।
মিথিলার মুখে একটু একটু করে কথা ফুঁটতে শুরু করে; আম্মুর ইশারা অমান্য করে আগন্তকের গলা জড়িয়ে জানালায় উঁকিঝুঁকি মারে। প্রকৃতির নানাবিধ অনুষঙ্গ তাঁর শিশুমনেও দোলা দেয়। কখনো বা উচ্ছ্বাস তরঙ্গে দু’হাত বাড়ায়। মিষ্টি মধুর কলতানে মৈত্রী এক্সপ্রেস এর ছোট্ট কামরাটি পুনরায় যেন প্রাণ ফিরে পায়, চাচ্চু, তোমার আরেকটি পা কোথায়?
- কোথায় আবার; চরি-টুরি করতে গিয়ে বোধহয় কাটা পড়েছে!
মিলা ঠিক এমন এমন একটি সুযোগের জন্যই অপেক্ষা করছিল। এরপর নিশ্চয় লোকটির ভিতরকার জ্বলেওঠা তেজ নিভে যাবে!
অখচ এখানেও লোকটি অন্যরকম; মিলার কথা গায়ে না মেখে মিটমিট করে হাসে- উৎভ্রান্তের হাসি।
এই হাসিটাও মিলার অসহ্য, হাসছেন কেন, হাসতে লজ্জা করেনা?

আম্মুর আচরণে মিথিলার শিশুমন আহত হয়। অসহায় মানুষটার অপমানে সে নিজেও খানিকটা বিচলিত। আম্মুর হয়ে মিথিলা ক্ষমা প্রর্থণা করে, প্লীজ চাচ্চু, তুমি কষ্ট পেওনা। আম্মুর মনটা বোধহয় খারাপ; তাই এমন করছে।
মিথিলার সরল অভিব্যক্তি মিলাকে আহত করে। বুঝতে পারে, ঔদ্ধত্বের সীমা মাড়ানো ঠিক হয়নি। তাছাড়া লোকটি তো তার কোনো ক্ষতি করেনি!
মিলার তপ্ত হৃদয়ে অনুতপ্তের লু হাওয়া বয়ে যায়। সেই কতদিন আগে দেশ ছেড়েছে; বলতে গেলে আজ সে বিদেশ-বিভুঁইয়ে। আগ্রহভরে মিলা জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাবেন আপনি?
মিলার প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই; কানে বাঁজে কেবল একটানা শোঁ-শোঁ শব্দ। ট্রেনের জানালা ভেদ করে দৃষ্টির সীমারেখা আকাশের ঠিকানায়; যেখানে দ্বাদশীর চাঁদ ক্রীড়ারত।
মিলার অনুশোচনা ক্রমশ রিদ্ধ হয়। পুনরায় জিজ্ঞেস করে, রাগ করেছেন?
- না না ম্যাডাম, রাগ করবো কেন, আপনি তো মিথ্যে বলেননি; তাছাড়া দয়াকরে বসতে দিয়েছেন। অন্য কেউ হলে পুলিশ ডাকতো, না হয় হাতে দুটো পয়সা ধরিয়ে বিদায় করতো।
আতœতুষ্ঠির মাঝেও একবুক যন্ত্রণা;অন্যদিকে মিথিলার করুণ চাহনী, চাচ্চু, আপনার বুঝি কেউ নেই!
ব্যথায় মিলার দুচোখ জলে ছলচল করে। ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে তার ভাবনাগুলোও হামাগুড়ি দেয়। এই রাতের আঁধারে সে কোথায় উঠবে! ঢাকার পথঘাট খুববেশি চেনা নয়; তাছাড়া যুদ্ধের পর রাতারাতি সব বদলে গেছে। নিরবতার ক্ষণগুলো পার হলে আগন্তক মিলার পানে একদৃষ্টে তাকায়, চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, একটা কথা বলবে?
- কি কথা?
- ভুবনডাঙার কথা তোমার মনে আছে, মিলা?
মিলার এবার অবাক হওয়ার পালা। যে তার নিজের নাম, এমনকি গ্রামের নাম পর্যন্ত জানে, তাকেই কিনা অপমান করেছে!
মিলার সারামুখে লজ্জার আভা, কিন্তু আপনি কে!
খানিকটা সময় নিয়ে আগন্তক জানতে চায়, শাহেদের কথা তোমার মনে পড়ে?
এক অলৌকিক শক্তি মিলার নিজস্ব অনুভূতি কেড়ে নেয়। এক নিমিষেই তার পৃথিবীটা যেন বদলে যায়! মনে পড়ে ২৫ মার্চের কথা; বান্ধবীর বাসার নাম করে মিলা সেদিন সারা শহর ঘুরেছিল, অনাগত স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল। কিন্তু ঐ স্বপ্ন আঁতুড়ঘরেই প্রাণ হারায়।
অথচ সেই শাহেদ তার সামনে বসা; নিজের চোখদুটোকেও তার অবিশ্বাস, কিন্তু শাহেদ...........
শাহেদ পাথর চোখে তাকিয়ে রয়। বুকের মধ্যেএকখণ্ড ব্যথা ক্রমশ কুণ্ডলী পাকায়। দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে বলে, আমি মরিনি মিলা।
- তাহলে এমন হলো কেন; কেন সব স্বপ্ন ভেঙে গুড়িয়ে গেল!
মিলার ধরা গলায় অভিমানের রেশ। শাহেদের মনে হয় একটু একটু করে সে যেন ঘোর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। তার চারপাশে কালরাত্রির আবহ;ষ্পষ্ট দেখতে পায়- রাতে কি ঘটতে যাচ্ছে দিনের আলোয় তার বিন্দুমাত্র আভাস ছিলনা। সন্ধ্যার পর পরই পাক বাহিনীর সাজোয়া যানগুলো রাস্তার মোড়ে-মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করে। সবার মধ্যেই বিবমিষা; কি হয়, কি হয়! তখন পর্যন্ত আন্দাজ করতে পারেনি এই রাতটিই বাঙালী জাতীর কালরাত্রির মর্যাদা পাবে; বুঝতে পারেনি ভোটের রাজনীতিতে পরাজিত সৈনিক বুলেটের ভাষায় উত্তর দেবে।
ক্ষ্যাপা কুকুরের মত ওরা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। নাঃ, কোন বাছ-বিচার ছিলনা; নারী, শিশু, বৃদ্ধ কাউকেই শালারা ক্ষমা করেনি। এক একটি সতেজ প্রাণ মূহুর্তেই লুটিয়ে পড়ছিল। শহরময় শুধু লাশ আর লাশ; ঐ রাত্রেই ঢাকা শহরে প্রায় ৫০ হাজার নিরীহ বাঙালী খুন হয়।
মিলা ভয়ার্ত চোখে শাহেদকে জিজ্ঞেস করে, তারপর, তারপর কি করলে!
- আমি গাঁ ঢাকা দিলাম, বেশ কিছুদিন পালিয়ে বেড়ালাম, এরপর এক বৃষ্টিভেজা রাতে ভুবনডাঙায় হাজির হলাম; কিন্তু তোমাকে পেলাম না। কি নিষ্ঠুর তুমি, ফিরে আসার সময়টুকু পর্যন্ত দিলে না!
কিছুক্ষণ থেমে শাহেদ পুনরায় বলতে শুরু করে, তোমাকে হারিয়ে সেদিন কষ্ট পেয়েছিলাম সত্যি তবে ভেঙে পড়িনি। একসময় মনে হলো এই দেশ আমার প্রেম, আমার ভালবাসা। পদে-পদে মৃত্যুর সম্ভাবনা জেনেও যুদ্ধে নাম লেখালাম। একদিকে পাকবাহিনী অন্যদিকে তাদের দোসর রাজাকার; উঃ, সেকি টেনশন! মাঝে-মধ্যে দিশেহারা হয়ে উঠতাম। বৃষ্টিতে ভিজে, খেয়ে না খেয়ে ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম; শত্র“মুক্ত হলো জনগন; অর্জন করলাম লাল-সবুজের পতাকা। সেকি আনন্দ মিলা, একটা পা দিয়েছি তবু দুঃখ ছিলনা; কিন্তু আজ আমি ক্লান্ত। দূর্বিসহ জীবনের বোঝা বইতে-বইতে হাঁফিয়ে উঠেছি।
একজন মুক্তিযোদ্ধার সামনে মিলার মাথা নুঁয়ে পড়তে চায়, পায়ের ধূলো মাখতে সাধ জাগে।
- তোমাকে দেখে খুব ভালো লাগছে মিলা, স্বামী-সন্তান নিয়ে তো বেশ আছো!
কথা বলতে গিয়ে মিলার ঠোঁটদুটো তির-তির করে কেঁপে ওঠে। শাহেদের মুখের পানে তাকালে বুকের মধ্যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর কোন প্রান্তে যেন হাহাকার ওঠে। চিনতে কষ্ট হয়।
- বাবা-মা কোথায়?
- নেই মিলা; এক এক করে জীবনের সূতো কেটে- আজ আমি সূতাকাটা ঘুড়ি। অহর্ণিশ ঘুরপাক খাচ্ছি।
- কেন, স্ত্রী-পুত্র!
শাহেদ আরেক দফা হাসে।
- হাসছো যে!
শাহেদের কণ্ঠে তাচ্ছিল্লের ব্যঞ্জণা, আমার মতো পঙ্গুর আবার বিয়ে! তাছাড়া সবার ঘর-সংসার থাকতে নেই।
- কিন্তু বাইরের টানই বা কতদিন! এভাবে কি জীবন যাবে?
- হয়তো যাবে হয়তো যাবেনা; তবে অনুশোচনা নেই। মহাজীবনের পথে নিজেকে সঁপে দিয়েছি। ভেবেছিলাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেঁচে থাকবো, কিন্তু সে আশাও সুদুর পরাহত। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নতুন একটা খেলা শুরু হয়েছে।
শাহেদের আমিত্বের কাছে মিলার নিজেকে অসহায় মনে হয়। দুরন্ত কৈশর, চণ্ডিদের তুলশিতলা, শৈলেন বাবুর পোড়োবাড়ি, অভিসারের নির্ঘুম রাত, মলাটের ভাঁজে-ভাঁজে নীলখাম অসংখ্য সব স্মৃতি আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে; জেগেওঠে বুকের অন্তপুরে লুকিয়ে থাকা গোপন ব্যথাও।
কৈশরের মিলা কখনোই এমন সুস্থির ছিল না; কথার পিঠে কথা লাগিয়ে অস্থির করে তুলতো। অথচ এই মূহুর্তে তার মুখ দিয়ে কথা সরেনা। কিছুতেই বলতে পারবে না, একজন শাহেদের জন্য সে পাগলা গারদের চৌকাঠ ছুঁয়েছিল; অন্ধকার আকাশই তার সঙ্গী হয়েছিল।
জীবনের হিসেব গোলমেলে; এক অঙ্কের সাথে অন্য অঙ্কের কোন মিল নেই। যে শাহেদকে ছাড়া এক মূহুর্ত ভাবতে পারতো না, তাকে ছাড়াই কেটে গেছে জীবনের অনেকগুলো বছর!
পরিবর্তনের উল্টোমুখী স্রোতে শাহেদ নিজেও আজ অনেক দুর পর্যন্ত চলে এসেছে; মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো ভাবনা আর তাকে আলোড়িত করেনা।
শাহেদ ভাবতো, কোনদিন মিলার সাথে দেখা হলে কৈফিয়েত চাইবে। কিন্তু আজ আর কোনো কৈফিয়েত নেই; সব কৈফিয়েত তার নিজের কাছে। তা না হলে তার জীবনটা কেন লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে, কেনই বা একটি মানস প্রতিমা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে!
সঙসারের কথা যে শাহেদ ভাবেনি তা না, কিন্তু প্রতিমার অঞ্জলী দিতে দিতেই তো সে ক্লান্ত!
জীবন বড় বিচিত্র। কাছে থেকেও মিলা আজ অনেক দুরে; চোখেমুখে কষ্টের আল্পনা। শাহেদের বুকের গহীণে অভিমান গুমরে মরে। মিলাকে বলতে সাধ জাগে, ভেবনা মিলা; দুঃখের আগুনে পুড়ে-পুড়ে এ জীবন একদিন নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে; কোন মা আমার লাশটা ছুঁয়ে দেখবেনা, কোন মেয়ে বলবেনা-বাবা, ও বাবা, আমাকে তুমি কার কাছে রেখে যাচ্ছো! মাটির অভাবে এই দেহখানা হয়তো শেয়াল কুকুরে খাবে।
মিলার মধ্যেও ঠিক বিপরীতমুখী ভাবনা; হাজারো মানুষের ভীড়ে শাহেদ আবারো হারিয়ে যাবে। একমুঠো ভাত কিংবা আশ্রয়ের জন্য নিরন্তর ছুঁটাছুঁটি করবে; মৃত্যুর হীমশীতল কোলে লুটিয়ে পড়বে; অথচ মিলা তা জানতেও পারবেনা।
একটু-একটু করে ভাবনার পরিধি সংকুচিত হতে শুরু করে। টানা হুঁইসেল বাঁজিয়ে শোঁ-শোঁ শব্দ তুলে ছুঁটে চলে রাতের শেষ ট্রেন। পিছনে পড়ে থাকে সিগনাল বাতি, রেল লাইনের স্লিপার, বৈদুতিক খুঁটি, নাম না জানা অসংখ্য সব লোকালয় আর একখণ্ড পাথর।