মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ছোটগল্প - আব্দুল্লাহ আল দুররানী সনি

আব্দুল্লাহ আল দুররানী সনি
একটুকরো গল্প



স্যার ,

ঘড়িতে সময় রাত ২ টা তিন মিনিট। সোডিয়ামের হলুদ আলো আর রাতের নীরবতা ভেঙ্গে মাঝে মঝে ছুটে চলা কিছু ট্রাক। এটিএম বুথের বৃদ্ধ প্রহরী টুলে বসে ঘুমানোর আয়োজন করছে। রাস্তার মোড়ে সাইকেলে বিক্রি করছে গরম রুটি আর হালুয়া। রিক্সার সিটে পা তুলে দিয়ে ঘুমন্ত কিছু চালক। একজন গনিকার ক্লান্ত পথে ফেরা আর তাকে উদ্দেশ্য করে বাড়ির দড়োয়ানটার রগরানো খিস্তি। একটি ভ্যানে ভ্রাম্যমান চা সিগারেটের দোকান। দুইটি কিশোরি মেয়ে অনবরত হেসে চা বিস্কুট দিচ্ছে কাস্টমারদের। চা খাবার নামে অনেক গুলো লাল চোখ তাদের শরীর অবগাহন করছে। মাঝে মঝে এটা ওটা নেবার ছলে গায়ে স্পর্শ করে পান খাওয়া লাল দাঁত গুলো বের করছে। রাত বাড়ছে তার সাথে সাথে বাড়ছে নীরবতা। রাতের বোধয় আলাদা একটা গন্ধ থাকে।

যাত্রী ছাউনিতে আমি ছাড়া আছে আর তিনটা প্রানী। একরাশ কাপড় পেঁচিয়ে একজন যাযাবর আর দুটা কুকুর। পকেটে ৩য় বর্ষের মার্কসিট। সিগারেট আছে আর দুই তিনেক, তার তুলনায় রাতটা অনেক বড়। বিশ্বাস করেন স্যার আমি কাপুরুষ নই। আমি জীবন থেকে পালাতে চাচ্ছিনা বরং জীবন মুক্ত করতে চাচ্ছি। বাবাটা রিটায়ার্ড করেছে অনেক আগে অপেক্ষায় তার ছেলে সংসারের হাল ধরবে। মার আমার উপর অগাত বিশ্বাস আমি একটা কিছু করব। আমার ভয় করে স্যার, আমার ভয় করে । এতো গুলো চোখের আশা আমি পূরন কতে পারব না , পারব না স্যার। সময় সম্পর্কে একবার বলে ছিলেন নি:শ্বাস গ্রহন আর ত্যাগের মাঝামাঝি সময়কে বতর্মান বলে” আমার সময় আর বুঝা হলনা। মাকড়সা যেমন তার জালে কোন শিকার ধরা পড়লে ধীরে ধীরে তাকে জড়িয়ে ফেলে এবং এক সময় তাকে মেরে ফেলে আমরাও তেমন ডিপার্মেন্ট এর সেশন জটের জালে জড়াচ্ছি। সেশন জটের ঘুন পোকা আমার সময় খেয়ে তার বংশ বৃদ্ধি করছে। আর আমি দাড়িয়ে আছি জারুল গাছটার মত, সবাই আসে যায় , আমার আর যাওয়া হয়ে উঠেনা। ধীরে ধীরে আমার পা মাটির সাথে সখ্যতা করে আমাকেও করেছে গাছ, একটা জারুল গাছ। প্রেমিকাটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন কি করব স্যার? একদিন আপনিই শিখিয়ে ছিলেন সম্পর্কের মানে । তার দায়িত্ব নিতে কি আমি প্রস্তুত ? যাওয়ার আগে বলে ছিল ভাল থেকো, আমি ভাল নেই স্যার। স্যার আমি কি সত্যি কাপুরুষ? হয়ত মনে মনে বলবেন এত তাড়াতাড়ি হার মানলেন , আর কিছুদিন টিকতে পারলেনা। সম্ভব না স্যার , সম্ভব না। আপনি একদিন বলেছিলেন “ জীবন লম্বা হবার দরকার নেই, বড় হওয়ার দরকার ।” বড় হওয়া যেখানে অনিশ্চিত সেখানে আর জীবন র্দীঘায়িত করতে ইচ্ছা করছে না। কোন কিছুই এখন আর অনুকূলে নেই, আজ অর্থ যোগানের শেষ টিউশনিটাও চলে গেছে। মেসের ভাড়া দেবার আজ শেষ তারিখ, গত দুই মাসের ভাড়া বাকি । দুঃশ্চিন্তার ছাড় পোকা আমায় সারা রাত জাগিয়ে রাখে, আমি ঘুমাতে পারি না স্যার। আমার ইচ্ছা গুলো মধ্যবিত্তের অভিমান হয়ে দাড়িয়েছে। স্বপ্ন আর স্বপ্ন ভঙ্গের রনাঙ্গনে আমি পরাজিত। কোন এক দিন বলে ছিলেন “ তরুন বয়সে অধিকার আছে নতুন কিছু নেবার আর পরিণত বয়সে দায়িত্ব আছে দেবার।” আমি বোধয় পারলাম না।

মার হাতের পালং শাকের কথা থুব মনে পরছে। কত দুপুর পার করেছি না খেয়ে, মাকে বানিয়ে বনিয়ে বলেছি খেয়েছি। মা কি ধরতে পারত আমার মিথ্যা কথা ? মা তো সব বুঝে। আপনি একদিন বলে ছিলেন আমরা ওদের মত এতা উন্নত না কারন ওরা ওদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটাকে অবলিলায় ত্যাগ করতে পারে , আমরা যা পারি না। যেদিন পারব সেই দিন আমরাও উন্নত একটা জাতীতে দাড়াব। তাই আমি

জাফর সাহেব হতবিহব্বল। চিঠিটা এথানেই শেষ , বাকি অংশ জাফর সাহেবের কাছে নেই, বাজার থেকে শুটকি কেনার সময় এ কাগজটা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে ছিল। বাজার আলাদা করার সময় সুন্দর হাতের লেখা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ।তার পর এক মনে পড়তে শুরু করেন। জাফর সাহেব হঠাৎ ছটফট করতে থাকে। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল শুধু একটা বিষয় “ ছেলেটার শেষ পর্যন্ত কি হয়ে ছিল?” ভাবতে ভাবতে তার ঘুমন্ত ছেলে আয়াতের দিকে তাকালো। ছেলেটা ঘুমের মধ্যেও হাসে। তিনি পারবেনতো এই হাসি বাঁচিয়ে রাখতে? একটা দীর্ঘ শ্বাসের শব্দ।